০৭:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূর্যের ভর: নিক্তিতে না তুলেও ভর মাপা যায় কিভাবে?

সূর্যের ভর কত? সূর্যের ভর নির্ণয় করার জন্য সূর্যের কাছে যেতে হবে কী? সূর্যকে দাঁড়িপাল্লায় তুলতে হবে কী? জানার চেষ্টা করি খুব সহজ সূত্রের মাধ্যমেই কিভাবে সূর্যের ভর নির্ণয় করা যায়।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৪৯.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ১৫ কোটি কিলোমিটার।তবে এই দূরত্ব সবসময় একই থাকে না।থাকত যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরত বৃত্তাকার পথে।কিন্তু সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিন করে উপবৃত্তাকার পথে।সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলে অনুসূর।আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানকে বলে অপসূর।েপৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে জানুয়ারী মাসে।আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসে।অনেকেই মনে করে,শীতকালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে।কিন্তু তা হয়।জানুয়ারীর তীব্র শীতের সময়ই সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে।এই ধারণা ভূল হওয়ার আরো সহজ প্রমান হলো,ঐ জানুয়ারী মাসেই দক্ষিণ – গোলার্ধে থাকে তীব্র গরম।আসল কথা হল, শীত বা গরম পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না।নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষতল হেলে থাকার কারণে। অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকে।আর অপসূর অবস্থানে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫.২ কোটি কিলোমিটারে।

এখন,
☞ পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব, R = 1.5*10^10 m
☞ পৃথিবী, সূর্যকে সম্পূর্ণ একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয়, T = 365 days = 31536000 seconds
☞ মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G = 6.673*10^-11 Nm^2/kg^2

এই জানা মান গুলো দিয়েই সূর্যে ভর নির্ণয় করা সম্ভব! নিউটনের মহাকর্ষ বলের সূত্র থেকে আমরা জানি,

যদি সূর্যের ভর Ms এবং পৃথিবীর ভর Me হয় তাহলে এদের মধ্যাকার আকর্ষণ Fg বল হবে-

Fg = (G*Ms*Me)/R^2 ———— (1)

আবার সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সময় এই আকর্ষণের সমানের কেন্দ্রবিমুখী বলের সৃষ্টি হয়, যার ধরুন পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে ভেতরেও আসে না বাইরেও চলে যায় না। সেই কেন্দ্রবিমুখী বল Fc হবে-

Fc = (Me*v^2)/R —————(2)

যেহেতু আকর্ষণ বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সমান হতে হয়, কাজেই আমরা লিখতে পারি,

Fg = Fc
⇨ (G*Ms*Me)/R^2 = (Me*v^2)/R
⇨ Ms = (R*v^2)/G ———-(3)

আবার আমার জানি কোনো বস্তু বৃত্তাকার পথে চললে তার রৈখিক বেগ(v) ও কৌণিক বেগ(w) এর মাঝে সম্পর্ক হচ্ছে,

v = w*R
⇨ v= (2*π*R)/T
⇨ v^2 = 4*π^2*R^2/T^2

এখন এই v^2 এর মান ৩ নং সমীকরণে বসালেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত সূত্র পেয়ে যাব।

⇨ Ms = (4*π^2*R^3)/(G*T^2) [এটিই সূর্যের ভর নির্ণয় করার অত্যন্ত চমৎকার একটি সূত্র]

এখানে যথাযথ মান গুলো বসালে-

Ms = {4*(3.1416)^2*(1.5*10^10)^3} / {(6.673*10^-11)*(31536000)^2}

= 2*10^30 kg (প্রায়)

অর্থাৎ ২ এর পরে ৩০ টি ০ বসালে যতো হয়, ততো কেজি ভর সূর্যের।

Facebook Comments Box
ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সম্পাদনাকারীর তথ্য

Mominul Haque Rubel

সূর্যের ভর: নিক্তিতে না তুলেও ভর মাপা যায় কিভাবে?

আপডেট : ১১:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

সূর্যের ভর কত? সূর্যের ভর নির্ণয় করার জন্য সূর্যের কাছে যেতে হবে কী? সূর্যকে দাঁড়িপাল্লায় তুলতে হবে কী? জানার চেষ্টা করি খুব সহজ সূত্রের মাধ্যমেই কিভাবে সূর্যের ভর নির্ণয় করা যায়।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৪৯.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ১৫ কোটি কিলোমিটার।তবে এই দূরত্ব সবসময় একই থাকে না।থাকত যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরত বৃত্তাকার পথে।কিন্তু সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিন করে উপবৃত্তাকার পথে।সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলে অনুসূর।আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানকে বলে অপসূর।েপৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে জানুয়ারী মাসে।আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসে।অনেকেই মনে করে,শীতকালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে।কিন্তু তা হয়।জানুয়ারীর তীব্র শীতের সময়ই সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে।এই ধারণা ভূল হওয়ার আরো সহজ প্রমান হলো,ঐ জানুয়ারী মাসেই দক্ষিণ – গোলার্ধে থাকে তীব্র গরম।আসল কথা হল, শীত বা গরম পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না।নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষতল হেলে থাকার কারণে। অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকে।আর অপসূর অবস্থানে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫.২ কোটি কিলোমিটারে।

এখন,
☞ পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব, R = 1.5*10^10 m
☞ পৃথিবী, সূর্যকে সম্পূর্ণ একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয়, T = 365 days = 31536000 seconds
☞ মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G = 6.673*10^-11 Nm^2/kg^2

এই জানা মান গুলো দিয়েই সূর্যে ভর নির্ণয় করা সম্ভব! নিউটনের মহাকর্ষ বলের সূত্র থেকে আমরা জানি,

যদি সূর্যের ভর Ms এবং পৃথিবীর ভর Me হয় তাহলে এদের মধ্যাকার আকর্ষণ Fg বল হবে-

Fg = (G*Ms*Me)/R^2 ———— (1)

আবার সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সময় এই আকর্ষণের সমানের কেন্দ্রবিমুখী বলের সৃষ্টি হয়, যার ধরুন পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে ভেতরেও আসে না বাইরেও চলে যায় না। সেই কেন্দ্রবিমুখী বল Fc হবে-

Fc = (Me*v^2)/R —————(2)

যেহেতু আকর্ষণ বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সমান হতে হয়, কাজেই আমরা লিখতে পারি,

Fg = Fc
⇨ (G*Ms*Me)/R^2 = (Me*v^2)/R
⇨ Ms = (R*v^2)/G ———-(3)

আবার আমার জানি কোনো বস্তু বৃত্তাকার পথে চললে তার রৈখিক বেগ(v) ও কৌণিক বেগ(w) এর মাঝে সম্পর্ক হচ্ছে,

v = w*R
⇨ v= (2*π*R)/T
⇨ v^2 = 4*π^2*R^2/T^2

এখন এই v^2 এর মান ৩ নং সমীকরণে বসালেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত সূত্র পেয়ে যাব।

⇨ Ms = (4*π^2*R^3)/(G*T^2) [এটিই সূর্যের ভর নির্ণয় করার অত্যন্ত চমৎকার একটি সূত্র]

এখানে যথাযথ মান গুলো বসালে-

Ms = {4*(3.1416)^2*(1.5*10^10)^3} / {(6.673*10^-11)*(31536000)^2}

= 2*10^30 kg (প্রায়)

অর্থাৎ ২ এর পরে ৩০ টি ০ বসালে যতো হয়, ততো কেজি ভর সূর্যের।

Facebook Comments Box